Tuesday, June 24, 2014

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


আসুন, কুরআন-হাদীসের আলোকেই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত দল খুঁজে বের করি.

বর্তমানে প্রচলিত ইসলামের সাইনবোর্ড লাগানো যতটি দল আছে, তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করেন, বলুনতো হক্বপন্থী দল কোনটি?

তখন তারা প্রত্যেকে সর্বাগ্রে নিজের দলেরই নাম বলবে। আসুন এবার আমার দেখি কুরআন- হাদীসের আলোকে বর্তমান সময়ের হক্ব দল কোনটি? একথা আমাদের সবারই জানা যে, বর্তমানে কোনো মুসলিমদেশের কোনো শাসকই মুসলমানদের শাসক নয়। এরা শুধুমাত্র মুসলিম ভু-খন্ডের শাসক। তাই মুসলমানদের উপর চলমান জুলুম-নির্যাতনে তাদের কিছু আসে যায় না।

যেহেতু তারা দ্বীন থেকে ফিরে গেছে। তাহলে দেখি আল্লাহ তাআলা অন্যকোনো দলকে দাড় করালেন কিনা? কারণ আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে যখুনি কোনো দল সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তখুনি অন্য আরেক দল এর স্থলে দাড় করান। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

…যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
[সুরা মুহাম্মদ.-৩৮]

যেমন- অতীতে এক সময় বনী ইসরাঈল হক্বের উপর ছিল। পরে যখন তারা সরে দাড়ায় তখন অন্য দল দাড় করান। ঠিক তেমনি ইসলামের যুগে একেক সময় একেক দল সত্যের ঝান্ডা বহন করেছে।
কখনো ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল মদীনা, কখনো কুফা, কখনো দামেস্ক, কখনো বাগদাদ, কখনো ইস্তাম্বুল।
  • তো একটি দল সত্য থেকে বিচ্যুত হবার পর আল্লাহ তাআলা কীভাবে আরেকটি নতুন দল দাড় করাবেন এর সম্পর্কে তিনি কুরআনে বলেছেন —

    হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, তখুনি অনতিবিলম্বে আল্লাহ তাআলা এমন এক দলকে নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন, তারাও তাকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি হৃদয়বান, কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, কোনো তিরস্কারকারীদের তিরস্কারকে ভয় পাবে না । এটা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন । এবং আল্লাহ অধিক প্রজ্ঞাবান ।
    [সুরা - মায়িদা ঃ ৫৪]

    দেখুন এই আয়াতের মধ্যে বিকল্প ওই দলের ছয়টি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে ।
    যথা, ১-আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসবেন,
    ২- তারা আল্লাহকে ভালোবাসবে,
    ৩- তারা মুমিনদের প্রতি হৃদয়বান,
    ৪- কাফিরদের প্রতি কঠোর,
    ৫- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে,
    ৬- কোনো তিরস্কারকারীদের তিরস্কারকে ভয় পাবে না ।

    আসুন, এই আয়াতের আলোকেই আমরা দেখি বর্তমান দুনিয়াতে এমন কোনো দল আছেন কিনা?

    ১- আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসবেনঃ বলুনতো,

    কোন দল এমন যাদেরকে নিঃশেষ করে দিতে বিশ্বের সমস্ত কুফরি- তাগুতি শক্তি একাট্টা ? যাদের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে অথচ তারা তোরাবোরা থেকে সারাদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ? যাদের সংখ্যা একসময় খুব কম ছিল, আর এখন এক বিশ্বের প্রায় তেরটি অঞ্চলে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে কালো ঝান্ডা উত্তোলন করেছে ? এত কঠিন সময়ের পরও তাদের অভাবনীয় বিস্তার কি তাদের প্রতি আল্লাহর ভালবাসার নিদর্শন নয় ?

    ২- তারা আল্লাহকে ভালোবাসবে ঃ

    দেখুনতো, একমাত্র আল্লাহ এবং তার দ্বীনের জন্যে বর্তমানে কারা বেশি জীবন দিচ্ছে ? কারা আল্লাহর প্রেমে ধনকুবের রাজকুমার হওয়ার পরও পাহাড়- পর্বতকে বেছে নিয়েছে ? কারা দ্বীনের স্বার্থে একদেশ থেকে আরেকদেশে ছুটে বেড়াচ্ছে ? এটা কি আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসার নিদর্শন নয় ?

    ৩- তারা মুমিনের প্রতি হৃদয়বান ঃ

    বলুনতো, এমন কোন দল যারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমের জন্যে সাড়া দেয় । প্রতিটি মুসলিমভুমির প্রতি বাহিনী পাঠায় ? যেথায় মজলুমের কান্না শোনা যায় সেথায় তারা লাব্বাইক বলে ? কারা বলে আমরা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবো, যতদিন না বিজয় অর্জিত হবে, অথবা সেই সুধা পান না করবো যার স্বাদ গ্রহণ করেছেন হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাযি. ।

     ৪- কাফিরদের প্রতি কঠোর ঃ

    বলুনতো, কাদের ঢরে আমেরিকা দুতাবাস ছেড়ে পালায় ? কাদের হামলায় ভীত হয়ে আমেরিকা আফগান থেকে পালানোর পথ খুজছে? কারা বলে, রক্তের বদলা রক্ত, ধ্বংসের বদলে ধ্বংস ? কারা বলে, ফিলিস্তিনে আমরা শান্তিতে না থাকলে আমেরিকা শান্তিতে থাকতে পারবে না ?

    ৫- যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে ঃ

    বলুনতো, বর্তমান দুনিয়ায় এই ফরজ কারা আদায় করছে ? কারা বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে জিহাদের ঘাটি গেড়েছে ?? কারা ???

    ৬- যারা কোনো তিরস্কারকারীদের তিরস্কারকে ভয় পায় না ঃ

    বলুনতো, কারা বর্তমানে জঙ্গি- সন্ত্রাসী শব্দকে ভয় পায় না ? কারা সেই বাহিনী যারা দুনিয়ার কোনো তিরস্কারকেও ভয় পায় না ??

     *** হাদীসে এসেছে,
    সর্বদা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এক দল থাকবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। যখন এক দল চলে যাবে তখন অন্য দল এসে এর স্থলে দাড়াবে। এমন কি তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি দাজ্জালকে হত্যা করবে।
    এবার আপনারাই বলুন, বর্তমানে কারা জিহাদ করছে?

    *** হযরত উম্মে মালিক বাহযিয়্যাহ বলেন,
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ফেতনার কথা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
    তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তখন শ্রেষ্ট ব্যক্তি কে হবে? তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি যে তার চারণভুমিতে থাকবে এবং এগুলোর যথাযথ অধিকার আদায় করবে। এবং আল্লাহর হক্ব আদায় করবে। এবং ওই ব্যক্তি যে ঘোড়ার লাগাম ধরবে(যুদ্ধ করবে) শত্রুদের অন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করবে এবং শত্রুরাও তাকে ভয় দেখাবে।
    (তিরমিযি ২য়/আবওয়াবুল ফিতান)

    এবার আপনারই বলুন, বর্তমান এই ফেতনার যুগে কারা হচ্ছে ওই দল যারা বর্তমানে পাহাড়- পর্বতে মেষ-ছাগল ও গৃহপালিত পশু চড়াচ্ছে? কারা ওই গোষ্ঠী যারা ইতোমধ্যে বিশ্ব তাগুতের অন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করেছে?
    যারা বলে রক্তের বদলা রক্ত, ধ্বংসের বদলে ধ্বংস, আমেরিকা শান্তিতে থাকতে পারবে না! যাদের ফোনের আওয়াজ শুনে আমেরিকা দুতাবাস ছেড়ে পালায়!
    কারা হচ্ছে ওই বাহিনী যাদের ধরতে বিশ্বের কুফরিশক্তি একাট্টা? এগুলো কি তাদের সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রমাণ বহন করে না? এই আয়াত আর আর হাদীস হচ্ছে কষ্টিপাথর। আসুন, এগুলোর আলোকেই সত্যদল খুজে বের করি।

‘চরমপত্র’

ইমাম ইবন্ আল কাইয়য়্যিম (রহঃ)
-------------------------------


“হে ত্বগুতের দল (অত্যাচারী ও সীমালঙ্গনকারী শাসকগোষ্ঠী) !
হতে পারো তুমি আজকের ত্বগুত অথবা আগামীকালের ......
হতে পারো তুমি কোন শাসক বা নেতা ......
সিজার বা কিসরা......ফিরাউন বা নমরুদ...... ত্বগুতের কর্মচারী(ত্বগুতের বেতনভগী) আলেম...
তুমি হতে পারো ত্বগুতের আর্মি বা পুলিশ বা কোন গোয়েন্দা সংস্থার লোক ;

তোমাদের সবাইকে বলছি, শুনে রাখ.....

.”নিঃশ্চয়ই, আমাদের কোন সম্পর্ক নাই তোমাদের সাথে এবং আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের সাথেও। (আল মুমতাহিনাঃ ৪)


সম্পর্ক নেই তোমাদের পঁচে যাওয়া আইন বা নীতির সাথে......
সম্পর্ক নেই তোমাদের সংবিধান আর মূল্যবোধের সাথে আর তোমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোর সাথে।

আমরা আরও বলছি, শুনে রাখ...

“আমরা তোমাদের প্রত্যাখ্যান করি।আর তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরতরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে রইল।
(আল মুমতাহিনাঃ ৪)

“যতদিন তুমি আমাকে রাখবে এই দুনিয়ায় আমি চালিয়ে যাব জিহাদ তোমার শত্রুদের সাথে,
 আর তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে যাওয়াই হবে আমার পেশা।
 তাদের (শত্রুতা) আমি প্রকাশ করে দিব সবার সামনে।
আর (প্রতিনিয়ত) তাদের শক্তিকে খণ্ড-বিখণ্ড করে দিব আমার (ধারাল) কথা দ্বারা।
ধ্বংস হোক তারা!

আমার রব তো জানে তাদের গোপন বিষয়গুলো ,(আরও জানেন) তাদের অন্তরের সকল খারাবি । কারণ আল্লাহ তো অবশ্যই সাহায্য করবেন তাঁর দ্বীনকে ও তাঁর কিতাবকে, আর তাঁর নবীকে, পূণ্যজ্ঞান ও শক্তির দারা। কেউ কখনো ভাঙতে পারবেনা সত্যের এই স্তম্ভ, যদিও বা এক হয় সকল মানুষ আর জীন।”

Friday, May 2, 2014

ভারতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ-বাস্তবতা নাকি মিথ্যা ???

বিস্মাল্লাহির রাহমানির রাহিম।


ভারতের (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী, ভারতে কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ নিয়ে দেয়া বক্তব্য দেখে নাৎসি জার্মানিতে হিটলারের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসের কথা মনে পড়ে গেলো।
গোয়েবলস বলেছিল, 'যদি তুমি মিথ্যা বলো এবং তা বারবার প্রচার করতে থাকো, তাহলে একসময় মানুষ তা বিশ্বাস করবে।'
গোয়েবলসের এই তত্বের ওপর নির্ভর করেই নাৎসি জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকের সময়টায় মিত্রশক্তিকে রীতিমত নাকানী ছুবানি খাইয়ে ছেড়েছিল। সেই থেকে পৃথিবীর তাবৎ মিথ্যেবাদীরা গোয়েবলসকে তাদের গুরু মেনেছে। গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাকে সবসময় এমন কনফিডেণ্টলি উপস্থাপন করেছে যে সরলপ্রাণ মানুষ তো অবশ্যই অনেক ঝানু চিন্তার লোকও সেই মিথ্যার কাছে মার খেয়ে গেছেন।

 গত কয়েক দশক ধরে ভারতের হিন্দুত্ববাদী নরখাদকেরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই গোয়েবলসীয় কায়দায় নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। উগ্র হিন্দুদের এই ধারাবাহিক মুসলিম বিরোধী প্রোপ্যাগান্ডার অংশ হিসেবেই নরেন্দ্র মোদী বলেছে, “ভারতে ঢুকে আসা বাংলাদেশিরা বিছানা, বালিশ গুছিয়ে তৈরি থাকুন। ১৬ মের পর তাদের এদেশ থেকে তাড়ানো হবে।''
শুধু তাই নয় সে বলেছে, ''বাংলাদেশিরা ভারতের অন্য প্রদেশের মানুষের রুজি, রোজগারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।''

[১] বাহ কি চমৎকার!!! ভাবখানা যেন এমন যে ভারত হচ্ছে ধনে সম্পদে প্রাচুর্যে ভরপুর এমন একখানা দেশ যেখানে বাংলাদেশীরা তাও আবার মুসলমানরা গিয়ে গিয়ে দলে দলে ঢুকছেন আর যারা এখনো ঢুকতে পারেন নাই তারা ঢুকার জন্য মুখিয়ে আছেন!!!
আসল কথা হোল গত কয়েক দশক ধরেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংঘটন আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, শিবসেনা, বজরংদল, দুর্গাবাহিনী, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদসহ উগ্র হিন্দুরা জিগির তুলেছে ভারতে নাকি দু থেকে আড়াই কোটি বাংলাদেশী মুসলমান প্রবেশ করেছেন। এবং শুরু থেকেই ভারতীয় মিডিয়া এইরকম একটা ইস্যুকে ব্যাপক কাভারেজ দিয়ে আসছে।

ভারতের রাজনীতিবিদ, মিডিয়া এবং ইন্টেলেকচুয়ালরা ভারতের সাধারণ জনগণের মাথার মধ্যে এটা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশীরা ভারতে ঢুকে ভারত সয়লাব করে ফেলবে। ভারতের মানুষের রুটি রুযীতে ভাগ বসাবে। তাই বাংলাদেশী মুসলিমদের না খেদালে নিজেদের অস্তিত্ব টেকানো যাবে না। দুঃখের বিষয় ভারতের সাধারণ জনগণের একটা বিশাল অংশ কোনরূপ যাচাই বাছাই না করেই এই থিওরিটা গলঃধকরণ করেছেন। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত তাদের আর্গুমেন্টটা মূলত দুটা লজিকের ওপর দাড় করায়- এক-মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ থেকে পরিকল্পিতভাবে মুসলমান ঢোকানো হচ্ছে।

[দুই]-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য মুসলিমরা ভারতের মাটিতে দলে দলে প্রবেশ করছেন। প্রথম যুক্তিটি যে অবান্তর সেটি বোঝার জন্য কোন ঝানু পাবলিক হওয়ার দরকার নাই কমন সেন্স থাকলেই চলে।
বাংলাদশ থেকে ভারতে মুসলিমদের পরিকল্পিতভাবে ঢোকানর জন্য যে ব্যাকিং দরকার সেরকম কোন পৃষ্ঠপোষকতা এদেশের মুসলমানদের কাছে নাই। বাংলাদেশের কোন সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থা কোন কালেই এধরণের কোন পরিকল্পনা হাতে নেয় নাই।

আর রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ছাড়া এধরণের মাস্টার প্ল্যান কোনভাবেই নেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া বাংলাদেশে ভারতের সেবাদাস আওয়ামীলীগ ৯৬-২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে এখনো পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে। তারা কেন বাংলাদেশীদের ভারত যাওয়া বন্ধ করতে পারলো না এ প্রশ্নটি আসতেই পারে। আর আপনারা যদি পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বা এখনো ঘটতে থাকা ম্যাস মাইগ্রেশনের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন কোন একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে এরকম গণহারে জনশক্তি স্থানান্তর করতে হলে দুটো বিষয়ের সমন্বয় থাকা চাই।

এক হচ্ছে যে দেশ থেকে ব্যাপকহারে লোকজন মাইগ্রেট করবে সেখানে ওই মাইগ্রেশনের পক্ষে নানা ধরণের প্রচারণা চালাতে হয় যাতে করে মানুষ নতুন ভূখণ্ডে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
এবং দ্বিতীয় ব্যাপারটা হোল যে দেশে লোকজন মাইগ্রেট করবে সে দেশের সরকার এবং জনগণকে অবশ্যই নতুন জনগোষ্ঠীকে গ্রহণ করে নেয়ার ইতিবাচক মানসিকতা রাখতে হবে। এই দুটো বিষয় না মিললে কোন দেশ থেকেই অন্য কোন দেশে ব্যাপক জনশক্তি স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। আর এটা প্রমাণিত যে বাংলাদেশে ভারতে যাওয়ার পেছনে সমাজের কোথাও কোন প্রণোদনা দেয়া হয় না অথচ লন্ডন, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত হাজারো লোক যাচ্ছেন। কারণ ওসবের পেছনে রয়েছে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সিকিউরিটি, এই ফ্যাক্টরটা এখানে অনেক বড় একটা বিষয়। যে ভারতে মুসলমানদের দিনে দুপুরে সাম্প্রদায়িক দাংগা বাঁধিয়ে নৃশংসভাবে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয় সেই ভারতে মুসলমানরা কেন যাবেন? সবচাইতে মজার ব্যাপার হোল ভারত কিন্তু কখনো একথা বলে না যে ভারতে অবৈধ পাকিস্তানী মুসলমানরা রয়েছেন। অথচ মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এতোই যদি বাইরের দেশ থেকে ভারতে মুসলিম পুশ করতেই হয় তবে পাকিস্তান হত সবচেয়ে সুবিধাজনক।
কারণ ভারত এবং পাকিস্তানীরা একই ভাষায় কথা বলে। হিন্দি এবং উর্দুর মধ্যে কিছু শব্দের পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই বললেই চলে। এমনকি শ্রুতিকটু হওয়ার কারণে এখন আন অফিশিয়ালি খোদ ভারতেই সংস্কৃত ঘেঁষা হিন্দি শব্দগুলো বাদ দিয়ে আরবি-ফার্সি ঘেঁষা উর্দু ব্যাবহার হচ্ছে। ভারতীয় সিনেমা, মিডিয়া জগত এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই অতি সহজেই পাকিস্তানী মুসলমানেরা ভারতের মানুষের মধ্যে মিশে যেতে পারতেন।

তাছাড়া এধরণের একটি দুঃসাহসী প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার ক্ষমতা এই গোঁটা দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর আছে। অথচ ভারত পাকিস্তানের দিকে ভুলেও আঙুল দেখাচ্ছে না অথচ পাকিস্তানের সাথে ভারতের পর্যন্ত তিনবার যুদ্ধ হয়েছে এবং দেশদুটো সবসময়ই পটেনশিয়াল ওয়্যার এর জন্য তৈরি হয়েই থাকে। তাই ভারতকে দুর্বল করার জন্য যদি মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেতেই হয় তবে সেটি নিজ গরজেই পাকিস্তানের করার কথা বাংলাদেশের না। কিন্তু ভারত তার কামান বাংলাদেশের দিকেই দেগে চলেছে।

বাংলাদেশে থেকে ভারতে ম্যাস মাইগ্রেশনের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে যে অর্থনৈতিক ফ্যাক্টরে কথা বলা হচ্ছে সেটিও পুরোপুরিই অবাস্তব এবং ভিত্তিহীন। কারণ ভারত পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ। তাছাড়া দেশটি হাজারো সমস্যায় জর্জরিত।

  • [১]ভারতের শতকরা ৩৭% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে।
    [২] তবে বেসরকারি হিসেব মতে সেখানকার ৭৭% মানুের জীবনযাত্রা হচ্ছে পোভার্টি লাইনের নিচে।
    [৩] ভারতের ৫৩% পরিবারে টয়লেট নেই। নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় ৬০ কোটি লোক খোলা আকাশের নিচে মলমুত্র বিসর্জন দেয়।
    [৪] ভারত থেকে ঘুরে আসা অনেকেই বলেছেন যে সেখানে নাকি মহিলারাও পুরুষদের মত রাস্তার ধারে প্রকাশ্যে টয়লেট সারেন। দেশটিতে ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে এবং সারের অভাবে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেন।
    [৫] ভারতের পশ্চিম বাংলার ২৭% মানুষ মুসলমান হলেও সেখানটায় মুসলমানদের আর্থিক অবস্থা মোদীর গুজরাটের থেকেও করুণ। চাকরী বাকরীতে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ২%। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে সাচার কমিটির রিপোর্টটি দেখে নিতে পারেন।
    [৬] তাই বাংলাদেশের মুসলমানদের স্রেফ ভাষার জোরে পশ্চিম বাংলায় গিয়ে বসতি গাড়ারও দূরতম কোন সম্ভাবনা নেই। এখন আপনারাই বলুন কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কি এটা বিশ্বাস করবে যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ম্যাস মুসলিম মাইগ্রেশন ঘটছে? তারপরও ভারতের উগ্র হিন্দু সন্ত্রাসীরা এই ধরণের বানোয়াট ভুয়া গাঁজাখোরী তথ্য পরিবেশন করে ভারত এবং বাংলাদেশে উভয় দেশের মুসলমানদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
    অথচ সত্য হচ্ছে বাংলাদেশেই লক্ষ লক্ষ ভারতীয় অবস্থান করছে এবং সরকারী ও বেসরকারী চাকরি বাকরিতে ব্যাপকভাবে ঢুঁকে পড়েছে। এরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতি বছর ৩৭১৬ মিলিয়ন ডলার ভারতে পাঠায়

    [৭] খোদ ভারতীয় সুত্র বলছে ভারত যেসব দেশ থেকে সবচাইতে বেশী বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জন করে তার মধ্যে বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম।
    [৮] এখন বলুন তো ভারতে অবস্থানরত কথিত বাংলাদেশীরা বাংলাদেশে কত টাঁকা পাঠিয়েছে?

তাহলে কে কার দেশে মাইগ্রেশন করে, বাংলাদেশী মুসলিমরা ভারতে নাকি ভারতীয় হিন্দুরা বাংলাদেশে এটা আপনারাই বিচার করুন। ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্তির উপায় কি???
যে যাই বলুক, ভারতকে যতই আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র প্রমাণের চেষ্টা করুক বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুও এখন বোঝে যে ভারত বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাথে ভারতের আচরণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকেও খারাপ। তাই বাংলাদেশকেও তার পররাষ্ট্রনীতি এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্ধারণ করা উচিত ছিল,

অথচ বাংলাদেশের সবগুলো সরকারই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি একটি হাস্যকর ভিত্তির ওপর নির্ধারণ করেছে যেখানে বলা হয় 'সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়।' And this is absolutely nonsense, এটা কখনোই সম্ভব নয়।

কারণ পাগল এবং শিশু ছাড়া সবারই শত্রু থাকে। ভারত বাংলাদেশকে ক্রমশ মরুভূমি বানিয়ে দিচ্ছে, সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করছে, প্রতিটি চুক্তি ভঙ্গ করেছে, নিজ ভূখণ্ডে মুসলমানদের হত্যা করে যাচ্ছে এবং শেষমেশ ভারতীয় মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে। তো এই ভারত আমাদের বন্ধু হয় কিভাবে???

আওয়ামীলীগ তো অবশ্যই বাংলাদেশে ভারত বিরোধী রাজনীতির ফ্লেবার নিয়ে টিকে থাকা প্রচলিত অন্যান্য দলগুলোর কাছেও এ বিষয়ে কোন সমাধান আশা করাটা বোকামিপূর্ণ দুরাশা। এরা কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে কোন স্ট্যান্ড নিতে পারবে না।

কিন্তু মুহাম্মাদ বিন কাসিমকে মনে আছে তো আপনাদের?
কিংবা সুলতান মাহমুদ গজনবী বা মুহাম্মাদ ঘোরি
বা চোদ্দ জন ঘোরসওয়ার নিয়ে বাংলা বিজয় করা সেই ইখতিয়ার উদ্বীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খলজিকে?
জী, আমাদের এইসব সিংহ পুরুষদের পথ ধরতে হবে যারা গোটা ভারতকে ইসলামী শাসনের অধীনে নিয়ে এসেছিলেন। তাছাড়া আমরা মুসলমানরা এই ভারত ১০০০ বছর শাসন করেছিলাম। আমরা যদি জেগে উঠি তাহলে নিশ্চয়ই আবারো ভারত আমাদের করতলগত হবে। এই ভারত মুসলিমদের ভূখণ্ড।

কিন্তু এটি যখনই ব্রাহ্মণ্যবাদী মুশরেকদের হাতে গিয়েছে তখনি এই মুশরেকরা গোটা দক্ষিন এশিয়ার মুসলিমদের জ্বালাতন করেছে। তাই মুশরেকদের জ্বালাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ঔশুধ একটাই আর সেটা হোল ভারত বিজয়। সুতরাং গোটা পাক-বাংলা-ভারতের মুসলমানদের উচিত আবারো সেই ইসলামী খিলাফতের উথানের জন্য নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালানো।

রাসুল(স) বলেছেন, ''আল্লাহ আমার জন্য পৃথিবীকে সংকুচিত করেন, তখন আমি পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম দেখলাম। আর পৃথিবীর যতটুকু আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছিলো তার তাবৎ স্থানে আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌঁছুবে।''
(মুসলিম, আস-সহী ৪/২২১৫)


আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ আমাকে বলেছেন যে,
“এই উম্মাহর মধ্যে একটি দল সিন্ধ এবং হিন্দ এর দিকে অগ্রসর হবে।”
হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) বলেন,
“আমি যদি এই অভিযানে শরীক হতে পারতাম এবং শহীদ হতে পারতাম তাহলে উত্তম হত; আর যদি আমি গাজী হয়ে ফিরে আসতাম তবে আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম, যাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিতেন।”
(সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)


রাসুল(স) আরো বলেছেন, '', “অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন)
এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আলাইহি’ওয়াসাল্লাম) কে শামে (সিরিয়া) পাবে।”

[ইমাম বুখারীর উস্তাদ নাঈম ইবন হাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহআল তার আল ফিতান গ্রন্থে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন]

অতএব ভারতের মত একটা ডিস্টার্বিং এনটিটির সাথে টেবিল টকের চিন্তা বাদ দিয়ে বরং মুসলমানদের উচিত ভারতকে আবারো ইসলামী খিলাফত শাসন বেবস্থার অধীনে নিয়ে আসার জন্য নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং সেই সাথে তার জন্য প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। ইনশাল্লাহ আল্লাহর(সূওতা) ইচ্ছায় এবং মুমিনদের ইখলাসপূর্ণ কাজের বরকতে আবারো গোটা হিন্দ(পাক-বাংলা-ভারত) ইসলামী শাসনের অধীনে ফিরে আসবে।












link;;
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

১/http://www.ndtv.com/elections/article/election-2014/come-may-16-bangladeshi-immigrants-must-pack-up-narendra-modi-514883
২/http://www.indiatribune.com/index.php?option=com_content&view=article&id=2256%3Aits-official-37-live-below-poverty-line&catid=123%3Abusiness&Itemid=489
৩/http://www.bbc.com/news/world-asia-india-17455646
৪/http://www.kalerkantho.com/print-edition/deshe-deshe/2013/11/20/22947
৫/http://bangla.irib.ir/2010-04-21-08-29-09/2010-04-21-08-29-54/item/33459-ভারতে-বছরে-১৪-হাজারের-বেশি-কৃষক-আত্মহত্যা-করেন
৬/http://ncm.nic.in/pdf/compilation.pdf
৭/http://mzamin.com/details.php?mzamin=MTI2Njk%3D&s=Mg%3D%3D
৮/http://www.siliconindia.com/news/business/15-Nations-Sending-Highest-Remittances-to-India-nid-147515-cid-3.html

Monday, April 28, 2014

ইমাম মাহাদীর সম্পর্কে

আলহামদুলিল্লাহ্‌ ওয়াস সালাতু আসসালাম ওয়ালা সা'ঈদেনা আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলিহী ওয়া আসসাহাবী আসাল্লাম তাসলিমান কাসিরা।।আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আচ্ছালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু।

আজকে আমি  ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়  নিয়ে লিখার চেষ্টা করেছি।
কেয়ামতের আগে ইসলামের সর্বশেষ খলিফা হজরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম সম্পর্কে।
তাই কোনো ভুল হলে এই অধম ক্ষমা চায়। :)



ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে রাসূলে করীম (সাঃ)- এর ইন্তেকালের পর ইমাম মাহদী হওয়ার দাবীদার বহুলোকের আবির্ভাব এই পৃথিবীতে ঘটেছে এবং ঘটছে।
প্রকৃত মাহদীর আত্মপ্রকাশের পূর্বে বহুলোক মিথ্যা মাহদী সেজে মানুষের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে
   
(১) মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী
(২) সিরিয়ার এক বিভ্রান্ত যুবক
(৩) বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশালের এক ভন্ড মাওলানা
(৪) দক্ষিণ ইয়েমেনের একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী
(৫) ইরানের একজন সিয়া নেতা এবং
(৬) ১৪০০ হিজরীর শুভলগ্নে পবিত্র কাবা গৃহ দখলকারী এক মোহাম্মদ নামধারী যুবক ভন্ড মাহদী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

কিন্তু তাদের কারোরই পরিণাম সুখের হয় নাই। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পায়খানায় পড়ে প্রাণ হারায়।
সিরিয়ার বিভ্রান্ত যুবকটিকে বিষাক্ত বিচ্ছু কামড়িয়ে হত্যা করে।
ভন্ড মাওলানাটি পেশাব পায়খানা চাটতে চাটতে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।
বস্ত্র ব্যবাসায়ীটি বন্য কুকুরের আক্রমনে মারা যায়।
শিয়া নেতাটি গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে শোনা যায়।
অনুরূপভাবে ভন্ড নবী দাবীদারগণের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মন্তুদ হয়েছিল।

সুতরাং পৃথিবীর এই ক্রান্তিলগ্নে প্রকৃত মাহদীর পরিচয় জেনে রাখা প্রতিটি মুমীন বান্দার অবশ্য কর্তব্য।

  মাহদী শব্দটির মূলধাতু হচ্ছে ‘হাদিউন’ অর্থাৎ ‘হা’ বর্ণ, ‘দাল’ বর্ণ ও ‘ইয়া’ বর্ণ।
এর আভিধানিক অর্থ হল সুপথ, মঙ্গল পথ, সোজা পথ, আলোকিত পথ, যে পথে মঞ্জিলে মকছুদে পৌঁছা যায়, যে পথে প্রকৃত সত্তার উপলব্ধি সহজ হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে মাহদী শব্দের ব্যবহারিক অর্থ দাঁড়ায় সুপথ প্রাপ্ত কর্ণধার, হেদায়েত দানকারী ও আল্লাহ পাকের রেজামন্দি লাভকারী।

সুতরাং ইমাম মাহদী উচ্ছৃংখল মানব গোষ্ঠি ও সত্যপথ হতে বিচ্যুত মানব সমাজকে হেদায়েতপূর্ণ আলোকে আলোকিত করবেন এবং আলাহর সঙ্গে ও বান্দার সঙ্গে ঈমানের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করবেন।
(আল মুনজেদ, লেছানুল আরব, মিছবাহ)

 ইমাম মাহদী নিয়মিতভাবে কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা অন্য কোথাও লেখাপড়া করবেন না। এমনকি কোন সামরিক প্রশিক্ষণও তিনি কোন সামরিক একাডেমী থেকে গ্রহন করবেন না।
তার ‘এলমে লাদুন্নী’ অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান- বিজ্ঞান থাকবে। নিয়মিত কোন বিদ্যালয়ে না পড়েও তিনি অগাধ জ্ঞান- গরীমা ও মনীষার অধিকারী হবেন।
 ভূগোল, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্প, কৃষি, সাহিত্য, চারু ও কারুকলা, প্রকৌশল বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, সমর বিজ্ঞান, অস্ত্রচালনা, সৈন্য পরিচালনা, বক্তৃতা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি প্রভৃত জ্ঞান ও বিবেক বিবেচনার অধিকারী হবেন। পৃথিবীর প্রত্যেক বিষয়ের জ্ঞানের আধাররুপে তিনি আবির্ভূত হবেন।
(সারাংশ মেশকাত ও আবু দাউদ শ রীফ)

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে,
ইমাম মাহদী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর বংশে এবং খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জোহরার (রাঃ) আওলাদের মধ্যে থেকে আবির্ভূত হবেন।
তার মাতা-পিতার বংশ সূত্র হযরত হাছান (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হবে।
তার শারীরিক গঠন অজ্ঞাবয়ব একটু লম্বা ধরনের হবে।

  • যে কোন দলে বা যে কোন কাতারে দাঁড়ালে তাকে সকলের উর্ধে দেখা যাবে। তার গায়ের রং খুবই উজ্জল হবে এবং শরীর হবে নিখুঁত ও ছিমছাম। তার মুখমন্ডলে একটি বিশেষ নূরের জ্যোতি বিকশিত থাকবে। নাক উন্নত ও চেহারা সুগঠিত হবে।
    তাছাড়া তার চেহারা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর চেহারার অনুরুপ হবে।

    (মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফ)

  •  তার নাম হবে মোহাম্মদ। পিতার নাম হবে আব দুল্লাহ এবং মাতার নাম হবে আমেনা। তার মুখে সামান্য তোতলামী জড়তা থাকবে।
    এইজন্য কথা বলবার সময় তার একটূ কষ্ট হবে এবং কোন কোন কথা বলবার সময় ঐ কষ্টের কারনে বিরক্ত হয়ে নিজের উরুর উপর হাত মারবেন।

    (আবু দাউদ শরীফ)

    হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, ট্রাঞ্চ আকছানীয়া হতে হারেছ হাররাছ নামক এক ব্যক্তি বের হবে। তার সম্মুখ ভাগে থাকবে মানসুর নামে এক ব্যক্তি। যেরুপ কোরেশগণ [এখানে কোরেশের অর্থ ঐ কোরেশগণ যারা মসুলমান]।

    হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)- কে বসবাস করতে সাহায্য করেছিল, তদ্রুপ সে মোহাম্মদের (সাঃ) বংশধরগণকেও বসবাস করতে দিবে। তাকে (সর্বতভাবে) সাহায্য করা প্রত্যেক ঈমান দারের অবশ্য কর্তব্য।
    (আবু দাউদ শ রীফ)

    হযরত ইছহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (রা) তাঁর ছেলে হাছানের (রাঃ) দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, যেমন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) আমার ছেলে হাছানকে (রাঃ) বলেছিলেন, সেরকমভাবেই; তার বংশ হতে এমন একজন জন্ম গ্রহ্ন করবে যার নাম হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এর নাম অনুসারে রাখা হবে। তার শরীর আঁ হযরতের (সাঃ) দেহ মোবারকের মতই হবে।
    তারপর হযরত আলী (রাঃ) তার সম্পর্কে বিবৃতি দিলেন। তিনি সুবিচার ও ইনসাফ এর মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করবেন।

    হযরত ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন,
    যখন তোমরা খোরাছান হতে কালো পতাকা দেখতে পাবে তখন তাদের সাথে যোগদান করবে। কেননা আল্লাহর খলীফা মাহদী তাদের ভিতরে থাকবেন।
    (মাছনাদে আহমদ ও বায়হাকী শরীফ) সেই সকল হারেছ হারাছের। যার নাম ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম মাহদী (রাঃ) তাদের মধ্যে থাকবেন।]

    যখন ইমাম মাহদীর বয়স চল্লিশ বছর পরিপূর্ণ হবে এবং যখন তিনি খেলাফতের গুরুভার বহন করার ক্ষমতা অর্জন করবেন তখন তার আবির্ভাব ঘটবে। তার আবির্ভাবের পূর্ব মুহূর্তে পবিত্র রমজান মাসে চন্দ্র গ্রহন ও সূর্য গ্রহন হবে। যে বছরে এই অলৌকিক কান্ড ঘটবে সেই বছরই ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে।
    (মেশকাত শ রীফ)

    তার আবির্ভাব নিয়ে অনেকেই অনেক রকম ভবিষ্যতবাণী করেছেন। কিন্তু আমরা এ ধরনের ভবিষ্যত বাণী মেনে নিতে পারিনা। কারন ইসলামের বিধান অনুসারে এই ধরনের ভবিষ্যত বানী মানা হারাম।
    তবে এই বিষয়ে হাদীস শরীফে যেহেতু সুস্পষ্ট কোন কিছু বলা নাই তাই এই সম্বন্ধে নীরবতা পালন করাই ভাল। কেননা আল্লাহই এ সম্পর্কে ভাল জানেন।

    ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশের পূর্বে ও পরে পৃথিবীতে যেসকল বিপদাপদ ও লক্ষণ প্রকাশিত হবে সেসব সম্বন্ধে পবিত্র হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আমি সেসব তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
    একের পর এক বিপদ আসা হযরত হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,

    হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, একটি খাটের যেমন একটি তক্তার পর আরেকটি তক্তা হয়, সেরকম বিপদাপদও হৃদয়ের উপর পতিত হবে। যে হৃদয় তা পান করবে তার উপর একটি সাদা চিহ্ন অংকিত হবে। এইভাবে দুটি হৃদয় হবে।
    একটি শেত পাথরের মত শুভ্র হবে। যে পর্যন্ত জমীন ও আসমান বিদ্যমান থাকবে সে পর্যন্ত কোনও বিপদাপদ তার বিনষ্ট করতে পারবেনা। অন্য হৃদয়টি উলটানো পানির পেয়ালার মত কালো ও অপ রিষ্কার হবে।
    এটা কোন প্রকার ন্যায় ও মঙ্গল জানবে না এবং অমঙ্গলকেও প রিত্যাগ করবে না। কিন্তু সেচ্ছাকৃত ইচ্ছা দিয়ে পরিচালিত হবে। (মুসলিম শরীফ)

    • দুর্বল ঈমান এবং আমানত::
      হযরত হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) আমাদের কাছে দুইটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
      তারমধ্যে একটি আমি দেখেছি এবং অন্যটির জন্য অপেক্ষা করছি (অর্থাৎ একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে এবং অন্যটি এখনো ঘটেনি)। ঈমান এবং আমানত মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে।
      তিনি আরো বলেন যে মানুষ পবিত্র কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা ভুলে যাবে। তিনি আরো বললেন যে, কোন লোক নিদ্রায় যাবে তারপর তার অন্তর থেকে আমানত নিয়ে নেয়া হবে। শুধু একটি বিন্দুর মত দাগ থাকবে। এরপর সে আবার নিদ্রামগ্ন হবে এবং অবশিষ্ট আমানত তুলে নেয়া হবে। তখন মানুষ ব্যবসা করবার জন্য সকালে বাসা থেকে বের হবে কিন্তু কেউই আমানত ফেরত দিবে না।
      বলা হবে অমুক অমুক ব্যক্তি বিশ্বাসী এবং কোনও কোনও ব্যক্তিকে বলা হবে যে
      সে অনেক জ্ঞানী!
      সে কি চতুর!
      সে কি মার্জিত!
      কিন্তু সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও তার মধ্যে থাকবে না।

      (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)


       
    • সময় দ্রুত চলে যাওয়া::
      হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে,
      হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
      সময় নিকটবর্তী হবে (অর্থাৎ যাতায়াত এবং সংবাদ আদান প্রদানে বেশী সময় লাগবে না। এবং ধর্ম বিদ্যার মৃত্যু হবে। বিপদাপদ দেখা দিবে, কৃপণতা দেখা দিবে এবং হারাজ বেড়ে যাবে।
      সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন ‘হারাজ’ কি?
      উত্তরে আল্লাহর হাবীব আমাদের প্রিয় নবী হযরত (সাঃ) বললেন, হত্যা।

      (বোখারী ও মুসলীম)
      বর্তমান যান্ত্রিক যুগে রেল, স্টিমার, বিমান ও গাড়ীর সাহায্যে যাতায়াত অত্যন্ত সহজসাধ্য হয়ে গেছে এবং মোবাইল, ইন্টারনেট, রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমে দ্রুত সংবাদ আদান প্রদান হচ্ছে এছাড়া বর্তমানে খুন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে।
    • আখিরাতের উপর দুনিয়ার প্রাধান্য
      হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন,
      অন্ধকার রজনীর এক অংশ সদৃশ বিপদাপদের মধ্যেও সৎ কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও।
      কোন লোক সকালে মুমীন হয়ে বের হবে কিন্তু সন্ধ্যাবেলা কাফের হয়ে ফিরবে।
      আবার সন্ধ্যাবেলা মুমীন হবে কিন্তু সকালে আবার কাফের হবে। এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সহায়- সম্পত্তির বিনিময়ে তারা তাদের ধর্মকে বিক্রি করবে (অর্থাৎ ঈমানের কোনো শক্তিই থাকবে না।

      (মুসলিম শরীফ)
    • জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগ :: 
      হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ) হতে ব র্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
      অতি শীঘ্রই বিপদাপদ আপতিত হবে। সাবধান!
      ক্রমাগত বিপদাপদ ঘটবে। সাবধান!
      পুনরায় বিপদাপদ নেমে আসবে। তখন বসে থাকা ব্যক্তি পথ চলা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে এবং পথ চলা ব্যক্তি দৌড়ে লিপ্ত থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। সাবধান!
      যখন এটা ঘটতে থাকবে তখন ছাগল ও মেষের অধিকারী যেন তার নিজের ছাগল এবং মেষের নিকটেই থাকে। আর যার জমি আছে সে যেন তার জমির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে।
      তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যার উট, মেষ, ছাগল বা জমি নাই তার কি অবস্থা হবে ?
      উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে যেন তার তরবারি পাথরের সাহায্যে শান দিতে থাকে এবং সম্ভব হলে জয়ী হয়।

      হে আল্লাহ! আমি কি আমার সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি ? (তিনি তিনবার এই কথা বললেন)
      অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাকে পছন্দ না করা হয় এবং আমাকে কোন পাহাড়ে নিয়ে কেউ যদি তরবারি দিয়ে আমাকে আঘাত করে কিংবা তীর এসে যদি আমাকে হত্যা করে তখন আমার অবস্থা কি হবে?
      এর উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তোমার এবং তার গোনাহর বোঝা করবে এবং জাহান্নামে নীত হবে।
      (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)

      হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
      তখন তোমার কি অবস্থা হবে যখন তুমি দুষ্টু লোকদের ভিতরে পতিত হবে?
      তাদের সন্ধিনামা ও আমানত নষ্ট হয়ে যাবে এবং তারা মতবিরোধে লিপ্ত হতে থাকবে।
      তারা হবে এরকম (এ বলে রাসূল (সাঃ) স্বীয় অজ্ঞুলি সমূহকে আলাদা করে দেখালেন)
      তখন সে বললো, তখন আপনি আমাকে কি করতে নির্দেশ দেন?
      এর রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যা জান তা সম্পাদন করবে এবং যা জান না তা পরিত্যাগ করবে। তুমি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগ করবে এবং তোমার রসনাকে সংযত করবে।
      তুমি যা জান তা গ্রহন করবে এবং যা জান না তা গ্রহন করবে না। তুমি তোমার নিজের ব্যাপারে নিবিষ্ট থাকবে এবং জন সাধারনের কাজ পরিত্যাগ করবে।
      (তিরমিজী শরীফ)
    • ঘরে ঘরে বিপদ আপদ::
      হযরত ওমাছাহ বিন জায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) একবার মদীনা শরীফের উচ্চ স্থানের মধ্যে একটি সুউচ্চ পর্বতে উঠে বললেন, আমি যা দেখছি তোমরা কি তা দেখছো?
      সাহাবাগণ উত্তরে বললো না।
      তখন রাসূল (সাঃ) বললেন আমি বৃষ্টিপাতের ন্যায় তোমাদের ঘরে বিপদ-আপদ নিপতিত হতে দেখছি।
      (বোখারী ও মুসলীম শরীফ)
    • আখিরাতের উপর দুনিয়ার প্রাধান্য::
      হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, অন্ধকার রজনীর এক অংশ সদৃশ বিপদাপদের মধ্যেও সৎ কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও।
      কোন লোক সকালে মুমীন হয়ে বের হবে কিন্তু সন্ধ্যাবেলা কাফের হয়ে ফিরবে।
      আবার সন্ধ্যাবেলা মুমীন হবে কিন্তু সকালে আবার কাফের হবে।
      এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সহায়- সম্পত্তির বিনিময়ে তারা তাদের ধর্মকে বিক্রি করবে (অর্থাৎ ঈমানের কোনো শক্তিই থাকবে না।
      (মুসলিম শরীফ)
       

Saturday, April 26, 2014

ইমাম মাহদির আগমনের বছরটিতে মুসলিম উম্মাহর হজ্ব এবং তার বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারটি কেমন হবে?


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম


আসুন আগে আমরা ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ, আগমনের দিনের ঘটনা ও তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই। 
ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ সেই বছরের রমজান মাস থেকেই প্রকাশ পাবে। ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
“কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে”। 
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে’? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 
“না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে”।  
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উম্মতের কারা সেদিন নিরাপদ থাকবে’? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 
“যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থানরত থাকবে, সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং উচ্চ শব্দে আল্লাহু আকবর বলবে। পরে আরও একটি শব্দ আসবে। প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের।
ঘটনার পরম্পরা এরূপঃ শব্দ আসবে রমজানে। ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হবে শাওয়ালে। আরবের গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে। হাজী লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে জিলজ্জ মাসে। আর মুহাররমের শুরুটা আমার উম্মতের জন্য বিপদশেষটা মুক্তি। সেদিন মুসলমান যে বাহনে চড়ে মুক্তি লাভ করবে, সেটি তার কাছে এক লাখ মূল্যের বিনোদন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ঘরের চেয়েও বেশি উত্তম বলে বিবেচিত হবে”। 
(মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)


২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী বছরগুলোতে মধ্য রমজান শুক্রবার হবার সম্ভাবনা যে সালগুলোতে সেগুলো হল,

২০১৪ সালের ১১ ও ১২ ই জুলাই (১৪৩৫ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার),

২০১৫ সালের ২ ও ৩ জুলাই (১৪৩৬ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার),

২০১৭ সালের ৯ ও ১০ ই জুন (১৪৩৮ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার),
 
 ২০২০ সালের ৮ই মে (১৪৪১ হিজরির ১৫ ই রমজান শুক্রবার),
 
 ২০২২ সালের ১৫ ও ১৬ ই এপ্রিল (১৪৪৩ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার),

২০২৩ সালের ৬ ও ৭ ই এপ্রিল (১৪৪৪ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) এবং

২০২৫ সালের ১৪ ও ১৫ ই মার্চ (১৪৪৬ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার)
। 
চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এবং ২৯ বা ৩০ দিনে রমজান মাস হবার উপর ভিত্তি করে মধ্য রমজান শুক্রবার হিসাবে সাব্যস্ত হবে। 


‘প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের’ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে,
প্রথম শব্দটি আকাশ থেকে আসবে আল্লাহর নির্দেশে। কিন্তু যেহেতু এই শব্দের প্রভাব দুনিয়ার সতর্ক মুমিনদের চোখ খুলে দিবে এবং তাই কাফিররা প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় এমন বিকট কোন শব্দ ঘটাবে,
যাকে ‘শয়তানের শব্দ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এবং এই শব্দকে একটি প্রযুক্তিগত দুর্ঘটনা বলে দাজ্জালি মিডিয়াতে এমনভাবে রং লাগিয়ে প্রকাশ করা হবে, যাতে দুনিয়ার সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় এবং অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা সহজেই পথ ভ্রষ্ট হয়।  

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“রমজানে আওয়াজ আসবে। জুলকা’দায় গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে আর জিলহজ্জ মাসে হাজীলুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে”।
(মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)


হযরত আমর ইবনে শু’আইব এর দাদা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“জুলকা’দা মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। অবশেষে তাদের নেতা (হযরত মাহদি) পালিয়ে রোকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মধ্যখানে চলে আসবে। তাঁর অনীহা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। তাঁকে বলা হবে, আপনি যদি আমাদের থেকে বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা আপনার ঘাড় উড়িয়ে দিব। বদর যুদ্ধের সংখ্যার সমসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে বায়’আত গ্রহণ করবে। সেদিন যারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে”। 
(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৯) 


তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে, 
“বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন”
(আল মু’জামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬)

মুসতাদরাকেরই আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, 
‘লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত মাহদির কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি। মানুষ হযরত মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। হযরত মাহদি বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও ‘মাহদি’, আসমানেও ‘মাহদি’। 


ইমাম যুহরি বলেছেন,
হযরত মাহদির আত্মপ্রকাশের বছর দুজন ঘোষক ঘোষণা করবে। একজন আকাশ থেকে, একজন পৃথিবী থেকে। আকাশের ঘোষক ঘোষণা করবে, লোকসকল! তোমাদের নেতা অমুক ব্যক্তি।

আর পৃথিবীর ঘোষক ঘোষণা করবে,
ওই ঘোষণাকারী মিথ্যা বলেছে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর ঘোষণাকারী যুদ্ধ করবে। এমনকি গাছের ডাল-পাতা রক্তে লাল হয়ে যাবে। সেদিনকার বাহিনীটি সেই বাহিনী, যাকে ‘জাইশুল বারাজি’ তথা ‘জিনওয়ালা বাহিনী’ বলা হয়েছে।

সেদিন যারা আকাশের ঘোষণায় সাড়া দিবে, তাদের মধ্য থেকে বদরি মুজাহিদগণের সংখ্যার সমসংখ্যক লোক তথা তিনশো তেরজন মুসলমান প্রানে রক্ষা পাবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, মারাত্মক যুদ্ধ হবে – শেষ পর্যন্ত হকপন্থিদের মধ্যে শুধু বদর যুদ্ধের সেনাসংখ্যা (৩১৩) পরিমাণ লোক অবশিষ্ট থাকবে এবং তারা সেখান থেকে ফিরে এসে ইমাম মাহদির কাছে এসে বাইয়াত হয়ে যাবে। 


হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি”। 
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন, 
“তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবেতোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি”।
(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭;
মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০) 


এখানে ‘খলীফা সন্তান’ অর্থ সবাই বাদশা বা শাসকের সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে। আর ‘ধন ভাণ্ডার’ দ্বারা কাবা ঘরের নিচের প্রোথিত ধন সম্পদ হতে পারে। আবার নিছক রাজত্বও হতে পারে। কারও মতে, ফোরাত নদীর স্বর্ণ পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু রাজত্ব হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, 
উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, 
“জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে"।

(আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫;
মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০;
ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭;
আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)


 ‘জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি’, ‘তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে’ এবং এসময় ইমাম মাহদির ‘মদিনা থেকে মক্কায় চলে আসা’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যে, মৃত্যুবরণকারী খলীফা কোন এক সৌদি শাসক হবেন, যার মৃত্যুর পর তাঁর স্থালাভিসিক্তি নিয়ে মতবিরোধ ঘটবে। বর্তমানে সৌদি রাজ পরিবারের কাছে রাজত্বের পাশাপাশি মক্কা - মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সৌদি বাদশারা তাদের নামের সাথে তাদের মক্কা – মদিনার সংশ্লিষ্টতাও লিখে থাকেন।
যেমন বর্তমান বাদশা তাঁর নাম সরকারীভাবে এভাবে লিখেনঃ
King Abdullah Bin Abdul Aziz al Saud, Kingdom of Saudi Arabia & custodian of two holy mosques.
বর্তমান বাদশার বয়স ৯০ বছর সৌদি রাজ পরিবারের ব্যাপারে সেখানকার সাধারণ জনগণের অসন্তোষ, তাঁর ভবিষ্যৎ মৃত্যু এবং মধ্য প্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রও পিছিয়ে নাই।
গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে
নিউইয়র্ক টাইমস একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপে যার শিরোনাম How 5 countries in middle east could become 14’
সেখানে তারা বেছে নিয়েছে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সৌদি আরব।
(এর ভিতরে ৩ টি ভূখণ্ডের সংশ্লিষ্টতা আছে ইমাম মাহদির আগমনের দিন, আমরা হাদিস থেকে জেনেছি,
সিরিয়ারআবদাল বা শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ ইরাকেরআসাইব বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত হবে)।
আর সৌদি আরবকে ভাঙ্গার সম্ভাব্য কারণ দেখিয়েছেঃ
‘Saudi Arabia faces its own (suppressed) internal divisions that could surface as power shifts to the next generation of princes. The kingdom’s unity is further threatened by tribal differences, the Sunni-Shiite divide and economic challenges’.

হাদিসেও এসেছে ‘গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে’। আর সব মিলিয়ে যদি সত্যিই পশ্চিমারা অদূর ভবিষ্যতে এর সুযোগ নিতে চায়, স্বভাবতই সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তা হলঃ
“মক্কা - মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি” বা
custodian of two holy mosques.

 
হাদিসে মিনায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে বলা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাবে না। বরং ইসলামের শত্রু কাফেররা (ইহুদী খৃষ্টান ও মূর্তিপূজারীরা) আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে এবং তাদের অনুগত দাজ্জালি মিডিয়ার দ্বারা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অপপ্রচারটিই চালাবে মিডিয়ার স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ হবে হয়তোঃ “হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা”। তাদের অপপ্রচারের নমুনাটি নিম্নরূপ হতে পারেঃ
খবর পাঠকঃ আমরা এই মাত্র খবর পেলাম হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমরা সেখানে আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ [অথবা একটি আরব মুসলিম নাম] এর সাথে সরাসরি কথা বলব। 
হ্যালো, আবদুল্লাহ শুনতে পাচ্ছেন। 
আবদুল্লাহঃ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি। 
খবর পাঠকঃ মিনাতে ঠিক কি হচ্ছে এবং কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে?
আবদুল্লাহঃ মক্কার মিনা প্রান্তরে হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়েছে......। ওখানে ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে...। হাঙ্গামার কারণ এখনও অজানা...কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এর পিছনে ঐ সকল সন্ত্রাসীরাই জড়িত, যারা ইতিপূর্বে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরিয়ে আসছে ... এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে  আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসছে। মিনা প্রান্তরে অসংখ্য হাজীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। লাশগুলো রক্তের বন্যায় ভাসছে। আমি যে সকল জীবিতদের সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে অনেকেরই হজ্জের সামানা লুণ্ঠিত হয়েছে।

খবর পাঠকঃ আব্দুল্লাহ, কাবা শরীফের এই মুহুর্তে ঠিক কি অবস্থা?
আবদুল্লাহঃ উপস্থিত সন্ত্রাসীরা আল্লাহর পবিত্র ঘর কা’বা শরীফ দখল করে নিয়েছে এবং কা’বা শরীফের আশেপাশের হাজীদেরকে বন্দি করে ফেলেছে। সন্ত্রাসীরা এই হাজীদেরকে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। বন্দিদের মধ্যে ছোট ছোট শিশু এবং অজস্র নারী বিদ্যমান। চারপাশ থেকে চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সাহায্যের জন্য শিশুরা চিল্লাচিল্লি করে আহ্বান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সকল সন্ত্রাসীদের মধ্যে মার্কিনবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও বিদ্যমান  ...... যাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য আগে থেকেই অপারেশন জারি ছিল...... সন্ত্রাসীদের ধর্ম বলে কিছু নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই সন্ত্রাসীদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মতো হবে।
(ইমাম মাহদির আগমন ও  ৩১৩ জনের বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা আড়াল ও সন্ত্রাসী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া)
সংবাদ পাঠকঃ  আবদুল্লাহ আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা আবার আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করব। এইমাত্র আমাদের হাতে খবর এসে পৌঁছেছে যে, মক্কা শরীফকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জর্ডান ও মার্কিন সেনাদের নিয়ে গঠিত শান্তিরক্ষা বাহিনী যাত্রা শুরু করেছে। (তবে জোটবদ্ধ এই বাহিনীর পরিণামে কি হয়েছে, তা গোপন করা হবে)।
ইমাম মাহদির দলকে ধ্বংস করতে যাওয়া বাহিনীর বায়দা প্রান্তরে মাটির নিচে ধ্বসে যাওয়ার যে কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সে পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়ার মিথ্যা, বানোয়াট, ধোঁকা এবং জাদুময়ী অপপ্রচারের আন্দাজ আপনি করতে পারেন।    
সারা বিশ্বের জনসাধারণকে মিনার প্রান্তরের বিভিন্ন লাশের ছবি বার বার বিভিন্ন চ্যানেলে টিভি স্ক্রিনে দেখানো হবে আর ইমাম মাহদিকে পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করে ‘স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলতে থাকবে। আর সাথে থাকবে সুন্নতি লেবাসধারী সরকারী/দরবারি আলেমদের কুরআন হাদিসের আলোকে পুরো ঘটনার অপব্যাখ্যাওয়ালা টক শো। 
আমরা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি, বিভিন্ন ভূখণ্ডে কিভাবে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে সাধারণ মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। আর এটি তো আরও অনেক বড় ব্যাপার। মিডিয়ার চালে চলমান এমন অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামধারীরা সেদিন ইমাম মাহাদির কথা মানা তো দূরের কথা, এদের মুখ থেকে কি ধরনের সব প্রতিক্রিয়া বের হতে থাকবে ...... এর আন্দাজ করা কঠিন নয়।
পক্ষান্তরে ঐ সকল ব্যক্তি যারা বিবিসি/সিএনএন এর মতো পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও তাদের বিভিন্ন ভাষাভাষী দালাল মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সত্যকে গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র কাউকে ভয় করে না, কারও সাথে আপোষ করে না, যাদের অন্তর সদা হক্ক গ্রহণে উন্মুখ – তারা যদি পাহাড়ের গর্তেও অবস্থান করে, ইমাম মাহদির আবির্ভাবের জ্ঞান তাদের ঠিকই হয়ে যাবে। 


যেহেতু “রিসালাত আল খুরুজ আল মাহাদি” কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় এসেছে, 

“১৪০০ হিজরির পরে মানুষ ইমাম মাহদিকে ঘিরে একত্রিত হবে” (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
আর “আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিক” কিতাবে কালদা বিন জায়েদ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ 
“১৪০০ হিজরির সাথে আরও বিশ বা ত্রিশ বছর যোগ কর। এরপরে কোন এক সময়ে মাহদির আবির্ভাব হবে...”। (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)




source::
http://amin-baig.blogspot.com/2014/04/blog-post_13.html

Friday, April 25, 2014

হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম (abo hozorot isa alutaihis salam)



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 






       এই পৃথিবীর ২০০ কোটি খ্রিষ্টান ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে যীশু নামে পূজা করে ও ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর মা হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম কে মাতা মেরী নামে পূজা করে তখন থেকেই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর প্রতি আমার খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটু আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
  কোরআনের সূরা আল- ইমরান, সূরা মরিয়ম, সূরা নিসা, সূরা আম্বিয়া ও অন্যান্য সূরায় হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ও উনার মাতা সম্মানিত নারী হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে।
  • ইয়েশুয়া হল হিব্রু শব্দ। যার আরবি হল ঈসা আর ইংরেজী শব্দ হল Jesus, বাংলায় যাকে আমরা যীশু বলে থাকি।
    আল-কোরআনে ২৫ বারের বেশী ঈসা নামটি বলা হয়েছে।

    • হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে আল-কোরআনে কলেমাতুল্লাহ, রুহুল্লাহ, মসীহ, ইবনে মরিয়ম নামেও অভিহিত করা হয়েছে।
    মসীহ হল হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর একটি বিশেষ উপাধি। মসীহ শব্দের অর্থ হল দৃষ্টিদানকারী। যেহেতু হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর এই মুজেজা ছিল যে জন্মান্ধের চোখে উনি দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারতেন তাই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে মসীহ নামেও ডাকা হয়।
    • কলেমাতুল্লাহ মানে এই নয় যে খোদার কলেমা স্বয়ং ঈসা বনে গেল। বরং প্রকৃত অর্থ এই যে খোদার কলেমা বা বাণী থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সৃষ্টি হয়েছেন।
    • ঈসা রুহুল্লাহ মানে আল্লাহর আদেশ থেকে যার সৃষ্টি কিন্তু খ্রিষ্টান রা এই রুহুল্লাহ শব্দের অর্থ করে ঈসা/যীশু নাকি আল্লাহর রুহ বা আত্মা। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক ।
        আর ইবনে মরিয়ম মানে হল মরিয়মের ছেলে। ইবনে শব্দটি ব্যবহার করা হয় ছেলে ও বাপের ক্ষেত্রে যেমন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্দুল্লাহ। আর পিতা ও কণ্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিনতে শব্দটি। যেমন ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সকল সন্তানই পিতার নামে পরিচিত কিন্তু হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম পিতাহীন সৃষ্টি হওয়ার কারনে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে ইবনে মরিয়ম নামে অভিহিত করা হয়।
আরবী ভাষার এই ব্যাকরণ টা শুধু হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর জন্যই সংরক্ষিত।


  • আল- ইমরান মানে হল ইমরানের পরিবার। হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম এর পিতার নাম ছিল ইমরান। সূরা আল- ইমরানে মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সম্পর্কে প্রচুর আলোচনা করা হয়েছে। ইমরান ছিলেন বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের সম্মানিত ইমাম। হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর মায়ের নাম ছিল হান্না কিংবা হাসনা। উনি ছিলেন নিঃসন্তান।  হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম এর মায়ের মনের বাসনা ছিল যে উনার কোন সন্তান হলে উনি সেই সন্তান কে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের খেদমতের জন্য উৎসর্গ করবেন। পবিত্র কোরানে ঘটনাটি এভাবে উল্লেখ আছে –
    “ অতঃপর যখন সে ( ইমরানের স্ত্রী ) সন্তান প্রসব করলো তখন সে বলে উঠলোঃ হে পরওয়ারদিগার ! আমি তো মেয়ে প্রসব করেছি এবং পুত্র সন্তান তো এই কন্যা সন্তানের মত নয়। ”
    ( সূরা আল-ইমরান-৩৬ )

অর্থ্যাৎ ছেলে ও মেয়ে তো একরকম নয়।  তখন ইমরানের স্ত্রীর এই অভিযোগের সাথে সাথে আল্লাহ সুবহানাতায়াল উত্তর দিচ্ছেন,
“ আল্লাহ তো জ্ঞাত রয়েছেন সে যা প্রসব করেছে সে সম্পর্কে। ”
( সূরা আল-ইমরান-৩৬ )

অর্থ্যাৎ আল্লাহ সুবহানাতায়াল তাঁর দোয়া কবুল করেছেন এবং সে দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি জেনে শুনে এ কন্যা সন্তান দান করেছেন।
অতঃপর ইমরানের স্ত্রীর বলেনঃ
“ যাই হোক আমি এ মেয়ের নাম রাখলাম মরিয়ম এবং তাকে ও তাঁর ভবিষ্যত বংশধরকে শয়তানের ফেৎনা থেকে রক্ষা করার জন্য তোমারই  (আল্লাহ সুবহানাতায়াল) আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ”
( সূরা আল-ইমরান-৩৬ )

ইমরানের স্ত্রীর এ প্রার্থনাও কবুল করে আল্লাহ সুবহানাতায়াল দুনিয়া বাসীকে জানিয়ে দিলেন-
“ শেষ পর্যন্ত তাঁর খোদা এ মেয়ে সন্তান কে সন্তষ্টির সাথে কবুল করেছিলেন এবং তাকে খুব ভালো মেয়ে হিসাবে গড়ে তুললেন। ”
( সূরা আল-ইমরান-৩৭ )

হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর জন্মের কিছু পূর্বেই উনার পিতা মারা যান। হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম জন্মলাভ করার পর তাঁর মা তার পূর্বের ওয়াদা অনুসারে তাঁকে খোদার কাজের জন্য উৎসর্গ করতে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে নিয়ে যান। তখন অনেকেই হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর অভিভাবকত্ব নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। তখন লটারীর মাধ্যমে হযরত যাকারিয়া আলাইহিসসাল্লাম হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পান। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সাল্লাম ছিলেন হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর আপন খালু।
হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হন তখন উনার কাছে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তার দূত অর্থ্যাৎ ফেরেশতা জিবরাইল আলাইহিস সাল্লাম কে পাঠান।



আল-কোরানে সূরা মরিয়মে পুরো ঘটনাটি পর্যায়ক্রমিক ভাবে খুব সুন্দর ভাবে উল্লেখ করা আছে।
  • “ এমতাবস্থায় আমি মরিয়মের নিকট নিজের রুহ (অর্থ্যাৎ ফেরেশতাকে ) পাঠালাম, আর সে তার সামনে এক পূর্ণাঙ্গ মানুষের আকারে আত্মপ্রকাশ করলো। ”
সূরা মরিয়ম-১৭ )
-“ এ দেখে মরিয়ম বলে উঠলোঃ আমি তোমার হতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তুমি যদি সত্যই কোন খোদা ভীরু ব্যক্তি হয়ে থাকো। ”
( সূরা মরিয়ম-১৮ )

  • -“ আমিতো তোমার খোদার প্রেরিত ফেরেশতা, আমি এইজন্যই প্রেরিত হয়েছি যে, তোমাকে এক পবিত্র ছেলে দান করবো। ”
(সূরা মরিয়ম-১৯ )
-“ মরিয়ম বললোঃ আমার ছেলে হবে কি করে ? অথচ আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। আর আমি কোন চরিত্রহীনা নই। ”
সূরা মরিয়ম-২০ )
  • -“ ফেরেশতা বললোঃ এই ভাবেই হবে। তোমার রব বলিয়াছেন ইহা আমার পক্ষে সহজ, আর এইভাবে সৃস্টি এই জন্য করিব, যেন তাঁহাকে মানুষের জন্য একটা নিদর্শন করে দেই এবং নিজের তরফ থেকে এক রহমত বানাবো। এ কাজ অবশ্যই হবে। ”
( সূরা মরিয়ম-২১ )

অর্থ্যাৎ কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই তোমার সন্তান হবে। সেটা কিভাবে হবে এটা আল-কোরানে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেছেনঃ -
“ আর সেই মহিলা, মরিয়মের কথা আলোচনা করুন, যে নিজের সতীত্বের মর্যাদা রক্ষা করেছিল, আমি তার গর্ভে স্বীয় রুহ ( আমার নির্দেশ ) ফুকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার ছেলেকে জগৎবাসীর জন্য এক বিরাট নিদর্শন বানিয়েছিলাম। ”
( সূরা আম্বিয়া-৯১ )

এই রুহ সম্পর্কে সূরা বনী ইসরাঈলের ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন-
“ তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে। আপনি বলে দিন রূহ আমার পালন কর্তার আদেশঘটিত। এই বিষয়ে তোমাদের কে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। “ তাই এই রুহ যে শুধু মাত্র আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আদেশ তা এই বনী ইসরাঈলের এই আয়াত দ্বারাই বুঝা যায়।
তাই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর সৃষ্টি সম্পর্কে যে রুহের কথা বলা হয়েছে তা হল শুধু আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আদেশ।

পিতা ছাড়া হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর জন্ম হবার পর হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম তীব্র সামাজিক নিন্দার মাঝে পড়েন। এই ঘটনা টা যদি আমরা কোরআন থেকে দেখি তাইলে আল- কোরআনে বলা হয়েছে- “অতঃপর সে তার সন্তানকে কোলে করিয়া নিজ জাতির নিকট আনলো; লোকেরা তখন বলিতে লাগিল, হে মরিয়ম! তুমি গুরুতর পাপ কাজ করিয়াছ, হে হারুনের ভগ্নী/হারুনের বংশের মেয়ে ! তোমার পিতা কোন খারাপ লোক ছিল না, আর তোমার মাতাও অসতী ছিলেন না। তখন মরিয়ম তার বাচ্চার দিকে ইঙ্গিত করিল, তাহারা বলিল, আমরা এমন ব্যক্তির সঙ্গে কিরূপে কথা বলিব যে এখনও কোলের শিশু ? তখন ঐ শিশু বলিয়া উঠিল, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, এবং আমাকে নবী করিয়াছেন, আর তিনি আমাকে করিয়াছেন বরকতময়, আমি যেইখানেই থাকি না কেন, আর তিনি আমাকে নামায ও যাকাতের আদেশ করেছেন, যেই পর্যন্ত আমি জীবিত থাকি, আর আমাকে আমার মাতার সেবক করেছেন,
এবং তিনি আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নি। ” ( সূরা মরিয়ম, ২৭-৩২ )
স্তন্যপায়ী শিশু হযরত ঈসা আলাইহিসসাল্লাম এর জন্মের পরেই মাতার পবিত্রতার ব্যাপারে সাক্ষী দেওয়ার ঘটনাটি খোদ আল-কোরানেই চমৎকার ভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে।

কিন্তু তা সত্বেও ইহুদীরা হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম এর উপর বোহতানে আযীম বা ব্যভিচার করার জঘন্য অপবাদ দেয় আর এই কারনে ইহুদীদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর গযব বর্ষিত হতে থাকবে। ( সূরা নিসা-১৫৬)

পিতা মাতা ছাড়াই কিন্তু আদম আলাইহিস সাল্লামের জন্ম হয়েছে। আবার হাওয়া আলাইহিস সাল্লামের জন্ম হয়েছে শুধু উনার স্বামী আদমের শরীরের একটা অংশ থেকে। তাই পিতা বিহীন মাতার গর্ভ থেকে  হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর জন্ম নেওয়া কোন অস্বাভাবিক কিছু নয়।  ঈসা  আলাইহিস সাল্লাম এর পিতা ছাড়া জন্মের ব্যাপারে কোরানে বলা হয়েছেঃ ‘‘ খোদার নিকত ঈসার দৃষ্টান্ত হলো আদমের ন্যায়; এই রুপে যে, আল্লাহ তাঁকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন হও, আর অমনি সে হয়ে গেল।(সুরা আল ইমরান-আয়াতঃ৫৯)’’।

‘‘ মরিয়ম পুত্র মসীহ কিছুই ছিল না একজন রাসুল ব্যতীত। তাঁর পূর্বে আরো অনেক রাসুলই
অতীত হয়েছে। তাঁর মা একজন পবিত্র ও সত্যপন্থী মহিলা ছিল তাঁরা উভয়েই খাদ্য গ্রহন করতো ( সুরা মায়েদা, আয়াতঃ৭৫)’’।

ঈসা আলাইহিস সাল্লাম আর নব্যুওত টা ছিল শুধুমাত্র বনী ইসরাঈলদের মাঝে। বনী ইসরাঈল ছাড়া আর কোন জাতির কাছে উনি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান।




এই লিখাটি  [ Farabi Shafiur Rahman] এর নোট থেকে নেয়া।
নিচে এর লিংক দেয়া হল ::

https://www.facebook.com/notes/farabi-shafiur-rahman/%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%88%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A7%A7%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC/489722191041014


Tuesday, April 22, 2014

ইমাম মাহদি ও আগমনপূর্ব আলামতসমূহ: ( কেয়ামতের আলামত )


ইমাম মাহদি ও আগমনপূর্ব আলামতসমূহ: ( কেয়ামতের  আলামত )
মুনাফিকও কুরআন পড়বে