Friday, April 25, 2014

হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম (abo hozorot isa alutaihis salam)



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 






       এই পৃথিবীর ২০০ কোটি খ্রিষ্টান ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে যীশু নামে পূজা করে ও ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর মা হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম কে মাতা মেরী নামে পূজা করে তখন থেকেই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর প্রতি আমার খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটু আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
  কোরআনের সূরা আল- ইমরান, সূরা মরিয়ম, সূরা নিসা, সূরা আম্বিয়া ও অন্যান্য সূরায় হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ও উনার মাতা সম্মানিত নারী হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে।
  • ইয়েশুয়া হল হিব্রু শব্দ। যার আরবি হল ঈসা আর ইংরেজী শব্দ হল Jesus, বাংলায় যাকে আমরা যীশু বলে থাকি।
    আল-কোরআনে ২৫ বারের বেশী ঈসা নামটি বলা হয়েছে।

    • হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে আল-কোরআনে কলেমাতুল্লাহ, রুহুল্লাহ, মসীহ, ইবনে মরিয়ম নামেও অভিহিত করা হয়েছে।
    মসীহ হল হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর একটি বিশেষ উপাধি। মসীহ শব্দের অর্থ হল দৃষ্টিদানকারী। যেহেতু হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর এই মুজেজা ছিল যে জন্মান্ধের চোখে উনি দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারতেন তাই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে মসীহ নামেও ডাকা হয়।
    • কলেমাতুল্লাহ মানে এই নয় যে খোদার কলেমা স্বয়ং ঈসা বনে গেল। বরং প্রকৃত অর্থ এই যে খোদার কলেমা বা বাণী থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সৃষ্টি হয়েছেন।
    • ঈসা রুহুল্লাহ মানে আল্লাহর আদেশ থেকে যার সৃষ্টি কিন্তু খ্রিষ্টান রা এই রুহুল্লাহ শব্দের অর্থ করে ঈসা/যীশু নাকি আল্লাহর রুহ বা আত্মা। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক ।
        আর ইবনে মরিয়ম মানে হল মরিয়মের ছেলে। ইবনে শব্দটি ব্যবহার করা হয় ছেলে ও বাপের ক্ষেত্রে যেমন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্দুল্লাহ। আর পিতা ও কণ্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিনতে শব্দটি। যেমন ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সকল সন্তানই পিতার নামে পরিচিত কিন্তু হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম পিতাহীন সৃষ্টি হওয়ার কারনে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে ইবনে মরিয়ম নামে অভিহিত করা হয়।
আরবী ভাষার এই ব্যাকরণ টা শুধু হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর জন্যই সংরক্ষিত।


  • আল- ইমরান মানে হল ইমরানের পরিবার। হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম এর পিতার নাম ছিল ইমরান। সূরা আল- ইমরানে মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম সম্পর্কে প্রচুর আলোচনা করা হয়েছে। ইমরান ছিলেন বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের সম্মানিত ইমাম। হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর মায়ের নাম ছিল হান্না কিংবা হাসনা। উনি ছিলেন নিঃসন্তান।  হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম এর মায়ের মনের বাসনা ছিল যে উনার কোন সন্তান হলে উনি সেই সন্তান কে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের খেদমতের জন্য উৎসর্গ করবেন। পবিত্র কোরানে ঘটনাটি এভাবে উল্লেখ আছে –
    “ অতঃপর যখন সে ( ইমরানের স্ত্রী ) সন্তান প্রসব করলো তখন সে বলে উঠলোঃ হে পরওয়ারদিগার ! আমি তো মেয়ে প্রসব করেছি এবং পুত্র সন্তান তো এই কন্যা সন্তানের মত নয়। ”
    ( সূরা আল-ইমরান-৩৬ )

অর্থ্যাৎ ছেলে ও মেয়ে তো একরকম নয়।  তখন ইমরানের স্ত্রীর এই অভিযোগের সাথে সাথে আল্লাহ সুবহানাতায়াল উত্তর দিচ্ছেন,
“ আল্লাহ তো জ্ঞাত রয়েছেন সে যা প্রসব করেছে সে সম্পর্কে। ”
( সূরা আল-ইমরান-৩৬ )

অর্থ্যাৎ আল্লাহ সুবহানাতায়াল তাঁর দোয়া কবুল করেছেন এবং সে দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি জেনে শুনে এ কন্যা সন্তান দান করেছেন।
অতঃপর ইমরানের স্ত্রীর বলেনঃ
“ যাই হোক আমি এ মেয়ের নাম রাখলাম মরিয়ম এবং তাকে ও তাঁর ভবিষ্যত বংশধরকে শয়তানের ফেৎনা থেকে রক্ষা করার জন্য তোমারই  (আল্লাহ সুবহানাতায়াল) আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ”
( সূরা আল-ইমরান-৩৬ )

ইমরানের স্ত্রীর এ প্রার্থনাও কবুল করে আল্লাহ সুবহানাতায়াল দুনিয়া বাসীকে জানিয়ে দিলেন-
“ শেষ পর্যন্ত তাঁর খোদা এ মেয়ে সন্তান কে সন্তষ্টির সাথে কবুল করেছিলেন এবং তাকে খুব ভালো মেয়ে হিসাবে গড়ে তুললেন। ”
( সূরা আল-ইমরান-৩৭ )

হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর জন্মের কিছু পূর্বেই উনার পিতা মারা যান। হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম জন্মলাভ করার পর তাঁর মা তার পূর্বের ওয়াদা অনুসারে তাঁকে খোদার কাজের জন্য উৎসর্গ করতে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে নিয়ে যান। তখন অনেকেই হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর অভিভাবকত্ব নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। তখন লটারীর মাধ্যমে হযরত যাকারিয়া আলাইহিসসাল্লাম হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পান। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সাল্লাম ছিলেন হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম এর আপন খালু।
হযরত মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হন তখন উনার কাছে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তার দূত অর্থ্যাৎ ফেরেশতা জিবরাইল আলাইহিস সাল্লাম কে পাঠান।



আল-কোরানে সূরা মরিয়মে পুরো ঘটনাটি পর্যায়ক্রমিক ভাবে খুব সুন্দর ভাবে উল্লেখ করা আছে।
  • “ এমতাবস্থায় আমি মরিয়মের নিকট নিজের রুহ (অর্থ্যাৎ ফেরেশতাকে ) পাঠালাম, আর সে তার সামনে এক পূর্ণাঙ্গ মানুষের আকারে আত্মপ্রকাশ করলো। ”
সূরা মরিয়ম-১৭ )
-“ এ দেখে মরিয়ম বলে উঠলোঃ আমি তোমার হতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তুমি যদি সত্যই কোন খোদা ভীরু ব্যক্তি হয়ে থাকো। ”
( সূরা মরিয়ম-১৮ )

  • -“ আমিতো তোমার খোদার প্রেরিত ফেরেশতা, আমি এইজন্যই প্রেরিত হয়েছি যে, তোমাকে এক পবিত্র ছেলে দান করবো। ”
(সূরা মরিয়ম-১৯ )
-“ মরিয়ম বললোঃ আমার ছেলে হবে কি করে ? অথচ আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। আর আমি কোন চরিত্রহীনা নই। ”
সূরা মরিয়ম-২০ )
  • -“ ফেরেশতা বললোঃ এই ভাবেই হবে। তোমার রব বলিয়াছেন ইহা আমার পক্ষে সহজ, আর এইভাবে সৃস্টি এই জন্য করিব, যেন তাঁহাকে মানুষের জন্য একটা নিদর্শন করে দেই এবং নিজের তরফ থেকে এক রহমত বানাবো। এ কাজ অবশ্যই হবে। ”
( সূরা মরিয়ম-২১ )

অর্থ্যাৎ কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই তোমার সন্তান হবে। সেটা কিভাবে হবে এটা আল-কোরানে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেছেনঃ -
“ আর সেই মহিলা, মরিয়মের কথা আলোচনা করুন, যে নিজের সতীত্বের মর্যাদা রক্ষা করেছিল, আমি তার গর্ভে স্বীয় রুহ ( আমার নির্দেশ ) ফুকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার ছেলেকে জগৎবাসীর জন্য এক বিরাট নিদর্শন বানিয়েছিলাম। ”
( সূরা আম্বিয়া-৯১ )

এই রুহ সম্পর্কে সূরা বনী ইসরাঈলের ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন-
“ তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে। আপনি বলে দিন রূহ আমার পালন কর্তার আদেশঘটিত। এই বিষয়ে তোমাদের কে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। “ তাই এই রুহ যে শুধু মাত্র আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আদেশ তা এই বনী ইসরাঈলের এই আয়াত দ্বারাই বুঝা যায়।
তাই হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর সৃষ্টি সম্পর্কে যে রুহের কথা বলা হয়েছে তা হল শুধু আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আদেশ।

পিতা ছাড়া হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর জন্ম হবার পর হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম তীব্র সামাজিক নিন্দার মাঝে পড়েন। এই ঘটনা টা যদি আমরা কোরআন থেকে দেখি তাইলে আল- কোরআনে বলা হয়েছে- “অতঃপর সে তার সন্তানকে কোলে করিয়া নিজ জাতির নিকট আনলো; লোকেরা তখন বলিতে লাগিল, হে মরিয়ম! তুমি গুরুতর পাপ কাজ করিয়াছ, হে হারুনের ভগ্নী/হারুনের বংশের মেয়ে ! তোমার পিতা কোন খারাপ লোক ছিল না, আর তোমার মাতাও অসতী ছিলেন না। তখন মরিয়ম তার বাচ্চার দিকে ইঙ্গিত করিল, তাহারা বলিল, আমরা এমন ব্যক্তির সঙ্গে কিরূপে কথা বলিব যে এখনও কোলের শিশু ? তখন ঐ শিশু বলিয়া উঠিল, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, এবং আমাকে নবী করিয়াছেন, আর তিনি আমাকে করিয়াছেন বরকতময়, আমি যেইখানেই থাকি না কেন, আর তিনি আমাকে নামায ও যাকাতের আদেশ করেছেন, যেই পর্যন্ত আমি জীবিত থাকি, আর আমাকে আমার মাতার সেবক করেছেন,
এবং তিনি আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নি। ” ( সূরা মরিয়ম, ২৭-৩২ )
স্তন্যপায়ী শিশু হযরত ঈসা আলাইহিসসাল্লাম এর জন্মের পরেই মাতার পবিত্রতার ব্যাপারে সাক্ষী দেওয়ার ঘটনাটি খোদ আল-কোরানেই চমৎকার ভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে।

কিন্তু তা সত্বেও ইহুদীরা হযরত মরিয়ম আলাইহিস সাল্লাম এর উপর বোহতানে আযীম বা ব্যভিচার করার জঘন্য অপবাদ দেয় আর এই কারনে ইহুদীদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর গযব বর্ষিত হতে থাকবে। ( সূরা নিসা-১৫৬)

পিতা মাতা ছাড়াই কিন্তু আদম আলাইহিস সাল্লামের জন্ম হয়েছে। আবার হাওয়া আলাইহিস সাল্লামের জন্ম হয়েছে শুধু উনার স্বামী আদমের শরীরের একটা অংশ থেকে। তাই পিতা বিহীন মাতার গর্ভ থেকে  হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর জন্ম নেওয়া কোন অস্বাভাবিক কিছু নয়।  ঈসা  আলাইহিস সাল্লাম এর পিতা ছাড়া জন্মের ব্যাপারে কোরানে বলা হয়েছেঃ ‘‘ খোদার নিকত ঈসার দৃষ্টান্ত হলো আদমের ন্যায়; এই রুপে যে, আল্লাহ তাঁকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন হও, আর অমনি সে হয়ে গেল।(সুরা আল ইমরান-আয়াতঃ৫৯)’’।

‘‘ মরিয়ম পুত্র মসীহ কিছুই ছিল না একজন রাসুল ব্যতীত। তাঁর পূর্বে আরো অনেক রাসুলই
অতীত হয়েছে। তাঁর মা একজন পবিত্র ও সত্যপন্থী মহিলা ছিল তাঁরা উভয়েই খাদ্য গ্রহন করতো ( সুরা মায়েদা, আয়াতঃ৭৫)’’।

ঈসা আলাইহিস সাল্লাম আর নব্যুওত টা ছিল শুধুমাত্র বনী ইসরাঈলদের মাঝে। বনী ইসরাঈল ছাড়া আর কোন জাতির কাছে উনি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান।




এই লিখাটি  [ Farabi Shafiur Rahman] এর নোট থেকে নেয়া।
নিচে এর লিংক দেয়া হল ::

https://www.facebook.com/notes/farabi-shafiur-rahman/%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%88%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A7%A7%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC/489722191041014


No comments: